ডায়াবেটিসঃ ডায়াবেটিসের কারন, লক্ষন এবং ডায়াবেটিস কমানোর উপায় পোষ্টে আপনাদের স্বাগত্বম। আজকের পোষ্টে আপনাদের সাথে ডায়াবেটিস কি, ডায়াবেটিসের কারন, ডায়াবেটিসের লক্ষন এবং ডায়াবেটিস কমানোর উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্য অনুসারে, বিশ্বব্যাপী ৪২.২ মিলিয়ন মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। একই সময়ে, ২০১০ সালে, ৩০ মিলিয়ন মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছিল। 2017 সালে, এই সংখ্যাটি 7 কোটিতে উন্নীত হয়েছিল। একটি অনুমান অনুসারে, ২০২৫ সালের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা সাধারণ বলে মনে হয়। তবে আপনি কি জানেন না যে, এই রোগ মারাত্মক প্রমাণিত হতে পারে?
ডায়াবেটিস (Diabetes) রোগীরা কেবল এই রোগটি কতটা ভয়াবহ তা বলতে পারবেন। কেবল ভাবুন, আপনার শরীরের আঘাত এবং ক্ষতগুলি নিরাময় না হলে কতটা কষ্ট করতে হয়।
ডায়াবেটিস সর্স্পকে বিস্তারতি জানতে পুরু লেখাটা মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আজ আমরা ডায়াবেটিস কি, ডায়াবেটিসের লক্ষন, ডায়াবেটিসের কারন এবং ডায়াবেটিস কমানোর উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ডায়াবেটিস কি?
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা আপনার শরীরের রক্তে চিনির পরিমাণ বেশি হলে ঘটে। এটি বিপাকজনিত রোগের মধ্যে একটি।
আমরা শরীরে শক্তি দিতে খাবার খাই, যা পরে স্টার্চে রূপান্তরিত হয়। পরে স্টার্চ গ্লুকোজ হয়ে যায়। এই গ্লোকোজ আমাদের দেহের কোষে পৌঁছে এবং তা থেকে আমাদের দেহ শক্তি পায়।
ইনসুলিন হরমোন কোষগুলিতে গ্লোকোজ সরবরাহ করার জন্য কাজ করে। এই হরমোনগুলি শরীরে কম উত্পাদন হওয়ায় সঠিকভাবে কাজ করে না। যার কারণে শরীরে গ্লুকোজ বা চিনির স্তর বেড়ে যায়। চিনির মাত্রা বৃদ্ধির ফলে ডায়াবেটিস হয়।
সময়ের সাথে সাথে আপনার রক্তে খুব বেশি গ্লুকোজ থাকা স্বাস্থ্যের সমস্যার কারণ হতে পারে। শরীরে ক্ষত সারতে বেশি সময় লাগে, সময়ের সাথে এই সমস্যা বাড়তে থাকে।
ডায়াবেটিসের কোনও প্রতিকার না থাকলেও আপনি ডায়াবেটিস পরিচালনা এবং সুস্থ থাকার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন।
ডায়াবেটিসের কারণ:
ডায়াবেটিস এর কারণগুলি জানা থাকলে আপনি ডায়াবেটিস এড়াতে পারবেন। ডায়াবেটিস হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। যদি আপনি আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নেন এবং সময়মত এই অসুস্থকে চিনে নিন এবং ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করেন, তবে ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ পাওয়া যায়।
ডায়াবেটিসের কারণগুলি সম্পর্কে প্রায়শই আমাদের সম্পূর্ণ জ্ঞান থাকে না। এ কারণেই আমরা অনেক ভুল জিনিসকে ভালো মনে করে গ্রহণ করি। আসুন জেনে নিই ডায়াবেটিসের কারণ গলো?
ডায়াবেটিসের কারণগুলি:
১। বংশগতিঃ
ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ হ'ল বংশগত। একিট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, কোনও ব্যক্তির পিতামাতার মধ্যে যদি ডায়াবেটিস হয় তবে তার 30% থেকে 40% পর্যন্ত ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকে।
একই সময়ে, যদি কোনও ব্যক্তির বাবা-মা উভয়েরই ডায়াবেটিস থাকে তবে এই ঝুঁকিটি 80 শতাংশে বেড়ে যায়। অর্থাত্, যাদের বাবা-মায়েদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে, তাদের চিনি থেকে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
২। খারাপ জীবনযাত্রাঃ
আমাদের জীবনযাত্রা আজকের বিস্তীর্ণ জীবন দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। ব্যস্ত জীবনে আমরা ব্যায়াম করতে পারি না বা স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে পারি না।
এর বাইরেও অনেকে টেনশনে বা স্টেজে ভোগেন। এগুলি আমাদের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। আপনি যদি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ না করেন তবে আপনি ডায়াবেটিসকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন।
৩। স্থূলতাঃ
স্থূলত্ব ডায়াবেটিসের জন্যও দায়ী। অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির কারণে বিপি উচ্চ সমস্যা হয় এবং কোলেস্টেরলও ভারসাম্যপূর্ণ হয় না। যার কারণে আপনি ডায়াবেটিসের শিকার হতে পারেন।
আপনার যদি স্থূলত্বের সমস্যা হয় তবে আপনি পেটের চর্বি কমানোর সহজ উপায় পোষ্টটি পড়তে পারেন।
৪। বেশি মিষ্টি খাওয়াঃ
বেশি পরিমাণে চিনি খেলে শরীরে চিনির মাত্রা বাড়তে পারে যা ডায়াবেটিসের একটি বড় কারণ। তাই বেশি চা, কফি, কোল্ড ড্রিঙ্কস এবং চিনি খাবেন না।
এবং যদি আপনার পিতামাতার ডায়াবেটিস হয় তবে আপনাকে এটির যত্ন নিতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের খুব কম মিষ্টি খাওয়া উচিত।
৫। গর্ভাবস্থায় বেশি ওষুধ সেবন করাঃ
মহিলারা প্রায়শই গর্ভাবস্থায় অনেকগুলি ওষুধ খান। তবে এই সময়ে বেশি ওষুধ খাওয়া আপনার পক্ষেও বিপজ্জনক এবং আপনি ডায়াবেটিসের শিকার হতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় ঔষধ খাওয়ার চেয়ে সবসময় খাবারের দিকে বেশি মনোনিবেশ করা উচিত। শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ভাল খাবারও প্রয়োজনীয়। যদি আপনি সঠিক পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খান তবে ওষুধের প্রয়োজন হবে না।
৬। তামাক বা ধূমপানের প্রতি আসক্তিঃ
তামাক বা ধূমপানের আসক্তি শরীরে অনেক রোগ সৃষ্টি করে যার মধ্যে একটি হ'ল ডায়াবেটিস। তামাকের মধ্যে পাওয়া গ্লুকোজ শরীরের পাচনতন্ত্রকে প্রভাবিত করে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি তৈরি করে।
এছাড়াও ধূমপানের সময় নির্গত ধোঁয়ায় আর্সেনিক, ফর্মালডিহাইড এবং অ্যামোনিয়া রয়েছে যা ডায়াবেটিসকে আমন্ত্রণ জানায়।
ডায়াবেটিস যদি এইগুলির কোনও কারণে ঘটে থাকে তবে আপনার পক্ষে সঠিক সময়ে এটি চিহ্নিত করা এবং চিকিত্সা করানো গুরুত্বপূর্ণ।
তাহলে আসুন এখন জেনে নিই ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলি কী কী?
ডায়াবেটিসের লক্ষণ:
আপনার যদি ডায়াবেটিস আছে কি না তা আপনি যদি জানেন না, তবে আপনার এই সমস্যা আছে কিনা তা আপনি নীচের বিষয়গুলি থেকে জানতে পারবেন, এটি আপনাকে এই রোগটি আগাম থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করবে।
১। ঘন ঘন প্রস্রাব করাঃ
ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে রোগীর ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। আসলে, এই প্রক্রিয়াটির দ্বারা শরীরে আরও চিনি উপস্থিত থাকে যা শরীর থেকে বেরিয়ে আসে। যদি আপনি এটির মতো অনুভব করেন তবে আপনার অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
২। ক্লান্ত বোধঃ
আপনি কি 8 ঘন্টা পুরো ঘুমের পরেও ক্লান্ত বোধ করেন? যদি এটি হয় তবে এটিকে সাধারণ হিসাবে বিবেচনা করবেন না। কারণ ডায়াবেটিক শরীরে কার্বোহাইড্রেটগুলি সঠিকভাবে ভেঙে যায় না।
এজন্য দেহ শক্তি পায় না যা ক্লান্তির কারণ হয়ে থাকে। আপনি যদি এরকম কোনও লক্ষণ দেখেন তবে তা পরীক্ষা করে দেখুন।
৩। ঘন ঘন ক্ষুধাঃ
আপনি যদি বার বার ক্ষুধা অনুভব করেন তবে পরীক্ষা করুন। আসলে, ডায়াবেটিস শরীরে ইনসুলিন তৈরি হয় না। যার ফলে আমাদের কোষগুলি শরীরে উপস্থিত চিনি শোষণ করতে পারে না। এই কারণেই ডায়াবেটিস রোগিরা বার বার ক্ষুধা অনুভব করেন।
৪। ওজন হ্রাসঃ
যদি আপনি অকারণে ওজন হারাতে থাকেন তবে এটি ডায়াবেটিসের লক্ষণ হতে পারে। যদি এটি ঘটে থাকে তবে একজন চিকিত্সকের সাথে দেখা করুন এবং ওজন কমানোর কারণ সন্ধান করুন।
৫। দৃষ্টিশক্তি হ্রাসঃ
ডায়াবেটিস আমাদের চোখকেও প্রভাবিত করে। তাই যদি আপনি ঝাপসা দেখেন তবে রক্তে সুগার পরীক্ষা করে নিন।
৬। যে কোনও ক্ষত সারতে বেশি সময় লাগেঃ
সাধারণভাবে, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে কোনও আঘাত যদি শরীরে কোথাও ঘটে, ক্ষতটি দ্রুত নিরাময় হয়। তবে ডায়াবেটিস শরীরে, ক্ষতটি দ্রুত নিরাময় হয় না। যেহেতু শরীরে চিনির স্তর বৃদ্ধি পায়, ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণ ঘটে।
এ ছাড়া শরীরে রক্ত সঞ্চালনও ডায়াবেটিসের কারণে ধীর হয়ে যায়। যার কারণে এটি নিরাময়ে সময় লাগে। আপনার যদি এইরকম অবস্থা থাকে তবে অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে যান।
ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
ইতিমধ্যে আপনি ডায়াবেটিস সম্পর্কে জেনে গেছেন এবং এর কারণ এবং লক্ষণ গুলি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে ডায়াবেটিস কমানোর উপায় বা ডায়াবেটিস থেকে বাচাঁর উপায় কি?
সুতরাং আসুন আমরা আপনাকে সমাধানটিও বলি। ডায়াবেটিস থেকে বাচতে আপনি নিম্নলিখিত নিয়মানুসারে প্রতিরোধ করতে পারেন।
১। বিশুদ্ধ খাবার এবং পানীয়
ডায়াবেটিস রোগীদের খাওয়া-দাওয়ার বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত। সুতরাং, চিকিত্সকরা ডায়াবেটিসের জন্য একটি বিশেষ ডায়েট চার্ট তৈরি করেন এবং সেই অনুযায়ী ডায়াবেটিস কমানোর খাবার খাবেন।
যে কেউ শাকসব্জী, টমেটো, গাজর, কমলা, কলা এবং আঙ্গুর খেতে পারেন। এগুলি ছাড়াও মাছ, ডিম এবং দই খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। উচ্চ প্রোটিনযুক্ত ২২ টি খাবার।
২। যোগ বা ব্যায়াম করুন
আপনার জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনুন এবং ম্যানুয়াল শ্রম শুরু করুন। আপনি যদি জিমে যেতে না চান তবে অবশ্যই দিনে তিন থেকে চার কিলোমিটার হাঁটুন, ব্যায়াম করুন বা যোগব্যায়াম করুন।
৩। কম মিষ্টি খাওয়াঃ
সর্বদা কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার খান। খাবারে মিষ্টি পুরোপুরি বাদ দিন বা কম মিষ্টি খান। আপনার ডায়েটে শাকসবজি, তাজা ফল, পুরো শস্য ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করুন। এগুলি ছাড়াও আপনার আঁশ গ্রহণ করা উচিত।
৪। বেশি পরিমাণ খাবার খাবেন না
একবারে খুব বেশি খাবার খাবেন না। কোন কিছুই বেশি খাওয়া ভালো না। নিয়ন্ত্রিত মাত্রার খাবার খান। তেল জাতীয় খাবার পরিহার করুন।
৫। ধূমপান করবেন না এবং অ্যালকোহল গ্রহণ করবেন না
ধূমপান এবং অ্যালকোহল গ্রহণ হ্রাস করুন, বা এই খারাপ আসক্তি চিরতরে ছেড়ে দিন। মাদকাসক্তি কোনওভাবেই আপনার দেহের পক্ষে উপকারী নয়, এ থেকে দূরে থাকাই ভাল।
৬। পর্যাপ্ত ঘুমঃ
আপনার অফিসের কাজ থেকে বেশি টেনশন নেবেন না এবং রাতে পর্যাপ্ত ঘুমাবেন। কম ঘুম স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল নয়। চাপ কমাতে, আপনি ধ্যান বা গান শুনতে পারেন।
৭। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুনঃ
আপনার স্বাস্থ্য নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখুন এবং সম্ভব হলে প্রতিদিন চিনি স্তর পর্যবেক্ষণ করুন। যাতে চিনি স্তরটি কখনও কখনও স্বাভাবিক স্তরের চেয়ে বেশি না হয়।
উপসংহারঃ ডায়াবেটিসের কারন, লক্ষন এবং ডায়াবেটিস কমানোর উপায় পোষ্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করবেন। ডায়াবেটিস নিয়ে আপনার কোন মতামত থাকলে কমেন্ট করুন। আমরা চাই কেউ যেন এ রোগে অক্রান্ত না হন। মহান আল্লাহ্ যেন সকলকে সুস্থ্য রাখের সেই কামনা করছি।